বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের স্বল্প মাত্রার অনুদানে বিত্তহীন অতি দরিদ্র নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারেন, এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের গোঘাট ও গুচ্ছগ্রামের নারীরা। গাইবান্ধার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গণউন্নয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ওই দুটি গ্রামের বিত্তহীন নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করছে। এই সংগঠন ওই দুই গ্রামে দুটি রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করে সেখানে নারীদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাবলম্বিতা অর্জনের বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাতে নেয়ার সহায়তাও করছে।
ফলে রিসোর্স সেন্টারগুলো ঘিরে এক নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছেন বিত্তহীন অতি দরিদ্র নারীরা। গণউন্নয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বিত্তহীন মহিলাদের সচেতনতা বৃদ্ধি (নারী অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সংখ্যা গণনা ও লিখন, এবং সাক্ষরতা অর্জন এসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে কামারজানি ইউপির বাটিকামারী ও গুচ্ছগ্রামে এই কর্মসূচি শুরু করে। ২০১২-২০১৩ সালে ৫ম কিস্তিতে অনুদান লাভ করে দুটি রিসোর্স সেন্টারে ৫০ জন করে বিত্তহীন নারীদের দল গঠনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করে। শাকসবজি উৎপাদনের সহায়তায় প্রশিক্ষণ ও বীজ প্রদান, সবজি বাগান প্রতিষ্ঠা, সেলাই প্রশিক্ষণ, দর্জি প্রশিক্ষণ ছাড়াও ছাগল পালন করে আয় বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে জনপ্রতি ১টি করে ছাগী প্রদান এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কর্মসূচির আওতায় স্থাপিত রিসোর্স সেন্টারগুলো আওতাভুক্ত এলাকায় দৃশ্যমান ও সহজেই মানুষের দৃষ্টি আর্কষণীয় হয়ে উঠেছে। বিত্তহীন নারীদের দৈনন্দিন রিসোর্স সেন্টারে অংশগ্রহণ, সেলাই প্রশিক্ষণ লাভ, দক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ লাভ ইত্যাদি কর্মসূচি মানুষের মধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলারা তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ লাভ করতে পারছে। উপকারভোগীরা রিসোর্স সেন্টারে সবজি বাগান তৈরির প্রশিক্ষণ লাভ করে মৌসুমী শাকসবজির আবাদ করে নিজেদের তরিতরকারীর অভাব মেটানো ছাড়াও কিছু বিক্রি করেও আর্থিক উর্পাজন করছে। উপকারভোগীরা ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ লাভ করে দক্ষতা অর্জন করছে যা উপকারভোগীদের মধ্যে স্বাবলম্বী হওয়ার আশাকে উদ্দীপ্ত করছে।
মহিলার সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা, নারী অধিকার, জেন্ডার বৈষম্য, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, সেনিটেশন ও পশু পালন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে হাতে কলমে সবজি বাগান প্রতিষ্ঠা ও ছাগল পালনের মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধির বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করছে। এ থেকে তারা নিজেদের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে স্বাবলম্বীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য উদ্যেগী হবে। এই কর্মসূচি দুস্থ ও বিত্তহীন মহিলাদের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। গণউন্নয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এই সংস্থার গৃহীত বিত্তহীন অতি দরিদ্র নারীর পুনর্বাসন প্রকল্প এলাকার নারী উন্নয়নে ও নারীদের স্বাবলম্বীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
এই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত রিসোর্স সেন্টারগুলো নারী মিলন কেন্দ্র ও প্রশিক্ষন সেল হিসাবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে। আওতাভুক্ত বিত্তহীন নারীরা সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ লাভ করে শাক-সব্জির আবাদ, ছাগল পালন করে আয় বৃদ্ধির সুযোগ লাভ করছে। মাত্র ২ লাখ টাকার অনুদানে ১০০ জন নারীকে স্বাবলম্বী করার এ দুঃসাহস নিয়ে বিত্তহীন নারীদের স্বাবলম্বী করা একটি মহৎ প্রয়াস।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস