জেলা প্রতিনিধি (গাইবান্ধা, ১৬মে): গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে এ মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষাণ-কৃষানিদের মুখে ফুটেছে হাসি।
সরেজমিনে জানা যায়, চরের বালুময় পতিত ভূমিতে এ মৌসুমে উৎপাদিত এক একটি কুমড়োর ওজন হয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত। অভাবী দরিদ্র পরিবারের অনেক সদস্য মিষ্টি কুমড়া চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলায় চরাঞ্চলের বালু ভূমিতে, ‘পিট’ পদ্ধতিতে ২০০৯ সাল থেকে কুমড়া চাষ করে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। জেলার চরাঞ্চলে ওই ৪টি উপজেলার ২৩টি স্পটে এ পদ্ধতিতে নদী সিকস্তি পতিত বালু ভুমিতে মূলত নারী কৃষকরাই এই কুমড়ার চাষ করছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় কৃষকরা ৪১৫ হেক্টর জমিতে এবার লাভজনক ফসল মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছে। এর মধ্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে চরাঞ্চলে চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে। নদী ভাঙ্গনে গৃহ হারা পরিবারের যারা ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে সেই পরিবারগুলোর দরিদ্র নারীরাই এই কুমড়ো চাষে এগিয়ে এসেছে।
ফলে নদী সিকস্তি বালুময় পতিত ভূমিতে মালিকদের সাথে আধিয়ারের ভিত্তিতে বাঁধে আশ্রিত নারীরা তাদের স্বামীদের সহযোগিতায় এই কুমড়ো চাষে সম্পৃক্ত হয়েছে।
বালুতে কুমড়ো চাষ প্রসঙ্গে জানা যায়, বালুময় ভূমিতে গর্ত খুঁড়ে গোবর ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে তা ভর্তি করা হয়। এক পর্যায় গাছের গোড়ায় কুইক কম্পোস্ট সারও দেয়া হয়। ১২ কেজি গোবর সার ও ৩শ’ গ্রাম টিএসপি ও পটাশ দিয়ে একেকটি পিট প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি পিটে ৩টি করে কুমড়ার চারা লাগানো হয়। চাড়াগুলো বড় হলে প্রত্যেকটি গাছে দুই থেকে ৩টি কুমড়া টিকিয়ে রেখে অতিরিক্তগুলো ছিঁড়ে ফেলা দেয়া হয়। কুমড়া গাছে সপ্তাহে দু’দিন একবার করে পানি সেচ দিতে হয়। এভাবে ১শ’ টি পিটে কুমড়া চাষে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ প্রায় ৭ হাজার টাকা। সেখানে আয় আসে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। কেউ কেউ বর্ষাকালে খাদ্য মেটাতে কিছু কিছু কুমড়া সংরক্ষণ করেও রাখে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের খলিফাটারি, বেলকা মেট্রোসিন, হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর, কালিরখামার, ভুঁইয়াপাড়া, ছয়ঘড়িয়া ও হরিপুর ঘাট, কাপাসিয়া ইউনিয়নের সিংগিজানি, লালচামার ও যুগিরভিটা, সদর উপজেলার মোল্লারচর, কুন্দেরপাড়া, কামারজানি, গো-ঘাট, গিদারি ইউনিয়নের গিদারি, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর ও রসুলপুর, উড়িয়া ইউনিয়নের সিংড়িয়া ও রতনপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি ও নীলকুঠি এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের সাংকিভাঙ্গায় পিট পদ্ধতিতে বর্তমানে কুমড়া চাষ করেছে ৬ হাজার ৬১টি পরিবার।
ঘাটার সাংকিভাঙ্গা গ্রামের মনু মিয়ার স্ত্রী ইসমত আরা বেগম জানান, গত দু’বছরে কুমড়া চাষ করে আর্থিকভাবে তারা যথেষ্ট লাভবান হয়েছেন। এর আগে তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিল। এখন তারা কিছুটা স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে।
সুন্দরগঞ্জের লালচামার গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রাশেদা বেগম জানান, আগে স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর করে সংসারে দুঃখ কষ্টে তাদের দিন কাটতো। এখন তিনি কুমড়া চাষ করার ফলে তাদের সংসারে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস