রূপালী আর লাকী ছুটছে স্কুলব্যাগ হাতে; ওয়াইনুল হক আর শাহীনও ওদের পাশাপাশি। প্রত্যেকের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এরা সবাই কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমীর অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাই এত তাড়া। গ্রামে বিদ্যালয় হওয়ায় কুন্দেরপাড়ার বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে, কয়েক বছর আগেও যা ছিল কল্পনাতীত।
'কুন্দেরপাড়া গ্রাম যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান' বলে একগাল হেসে দিলেন মিয়াজান আলী মণ্ডল। কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তিনি। আঙুলে কর গুনে বললেন, 'এই গ্রামে একটি উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়, একটি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় আর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। আশপাশের সব চরের জন্য আদর্শ এই কুন্দেরপাড়া।'
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। গ্রামটি পড়েছে কামারজানি ইউনিয়নে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রবেষ্টিত একটি চর কুন্দেরপাড়া। গ্রামে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় আগে থেকেই ছিল। ১৯৯৭ সালে চালু করা হয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। এতে সুযোগ পায় কেবল নারীরাই। ১৯৯৮ সালে কুন্দেরপাড়ায় চালু করা হয় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু আশপাশে কোথাও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা কী করবে তা ছিল অভিভাবকদের প্রশ্ন। অবশেষে স্থানীয় উদ্যোগী জনগণ ২০০৩ সালে স্থাপন করে কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমী। মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে ক্লাস শুরু হয় ২০০৪ সালে। অবকাঠামো খুবই সুন্দর। স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৩৫, শিক্ষক সাতজন।
দূরের ছাত্রীদের জন্য (নবম ও দশম শ্রেণী) আছে আবাসিক ছাত্রীনিবাস। এসএসসি পরীক্ষার আগে ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের রাতের লেখাপড়ার জন্য বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট। শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা করেছে গণ উন্নয়ন একাডেমী। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করছে তারা।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী লাভলী জানায়, প্রাইমারি শেষ করার পর তার বড় বোন রোজিনাকে মা-বাবা আর না পড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দেন। কারণ আশপাশে কোনো হাই স্কুল ছিল না। এ বিদ্যালয় থেকে পাস করে অনেক ছাত্রছাত্রীই এখন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। প্রতিবছরই ভালো ফল করছে গ্রামের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।