গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসিঘাট থেকে নৌকায় চেপে ভরা মৌসুমে কুন্দেরপাড়া চর মেলা প্রাঙ্গনে যেতে সময় লাগে ত্রিশ মিনিট। শুকনো মৌসুমের কারণে জেগে ওঠা অসংখ্য বালু চর পেরিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত ওই চরে যেতে সময় লাগল একঘন্টারও বেশি। কিন্তু সেখানে গিয়ে মানুষের উল্লাস আর আন্তরিকতায় যাত্রার কষ্ট একেবারেই গায়ে লাগে না। নদীর ঘাটে সারি সারি নৌকা দেখে মন জুড়িয়ে যায়। সদর উপজেলা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি-সাঘাটার চরগুলো থেকে শত শত নারী-পুরুষ সেখানে উপস্থিত। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া চর মেলার আজ মঙলবার ছিল শেষদিন।এলাকার নারী নেত্রী হামিদা বেগম কিছুটা মন ভার করে বললেন, চর এলাকার চারদিকে শুধু পানি আর পানি। চরের মানুষের জীবনে আনন্দ বিনোদন নেই বললেই চলে। এই মেলা তাই সবার নতুনত্বের স্বাদ জাগিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার অঙ্গীকার নিয়ে সেমবার সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি মাঠে শুরু হওয়া দু'দিনের ওই মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. এহছানে এলাহী। আজ মঙলবার সমাপণি দিনে গণ উন্নয়ন একাডেমির শিক্ষার্থীরা দৃষ্টি নন্দন শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে। এছাড়া দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহি পাতা খেলা, লাঠি খেলা ও ঘোড় দৌড়।মেলা ঘুরে দেখা গেল, সেখানে কৃষি, স্বাস্থ্য, আবাসন ও শিক্ষা বিষয়ক বেশ কয়েকটি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন উপকরণ ছাড়াও পোস্টার, পুস্তিকা, ফেস্টুন দেখানো হচ্ছে। বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার স্টল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে শিশুদের উপচে পড়া ভীড় ছিল লক্ষণীয়। চরাঞ্চলের জন্য একটি আদর্শ বাড়িও মেলায় স্থান পেয়েছে।পাতা খেলা ও লাঠি খেলা দেখতে আসা হারোডাঙ্গার চরের আব্দুর রউফ (৪৮) বললেন, এতো আনন্দ বহুদিন হলো পাইন্যা। প্রতিবচর হামরা অপেক্ষায় থ্যাকি কবে মেলা হোবে। গাইবান্ধা শহরের রেজিনা আকতার (২৬) বললেন, খেলাধুলা গান-বাজনার সাথে অনেক কিছু জানা হচ্ছে। এটা অনেক বড় পাওয়া।গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আব্দুস সালাম বললেন, চরের মানুষকে জীবন মান উন্নয়নের জন্য সকল ধরণের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টি এবং তাদের বিনোদন দিতেই এই মেলার আয়োজন।আজ বিকেলে গণ উন্নয়ন একাডেমির কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে দু'দিনের চর মেলা শেষ হয়। গণ উন্নয়ন কেন্দ্র ও কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ওই চরমেলা অনুষ্ঠিত হলো। সমাপণী অনুষ্ঠানে কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান নুরুন্নবী সরকার ছকমল বললেন, চরের মানুষ শহরের লোকজনের মত সুবিধা পায় না । তাদের জন্য শিক্ষা আর স্বাস্থ্য সুবিধা বাড়ানো দরকার।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস